দু'দিন আগের কথা ,
ওর হাত ধরে হাটঁছিলাম, খুব মজা করে একসাথে ফুচকা খেলাম ও খুব টক খেতে পছন্দ করত। ও বাইকে উঠতে ভয় পেতো। আমার সাথে রিকশায় ঘুরতে চেতো; আমিও কখনো না করি নি। সব সময় সব আবদার মানতাম। খুব ভালোবাসতাম তো! আজকের এই দিনে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। এরপর ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা। তারপর ভালোবাসার অনেকটা পূর্ণতা।
আজ হটাৎ একটু আগে ও ফোন করে ছাদে আসতে বললো। খুব দরকারী কথা আছে নাকি।
আভা আমাদের এলাকাতেই থাকে আর আমাদের বাসার নিচ তালায় ওর কাকির বাসা ; ও মাঝে মাঝেই এখানে আসে আমার সাথে দেখা করার জন্য। আর আমি তার অপেক্ষায় থাকতাম দেখা করার জন্য । আমরা প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন্তত তিনদিন দেখা করি ।
আজকে সেই তারিখ যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। ওর আর আমার পরিচয় হয়েছিল কলেজে , ও তখন ১ম বর্ষে আর আমি টেস্ট পরিক্ষা দেই ।
যাইহোক হাতে একটা গোলাপ নিয়ে দাড়িয়ে রইলাম ছাদে।
অনেকক্ষণ গোলাপটার ঘ্রাণ নিচ্ছিলাম।
প্রায় আধ ঘন্টা পর আভা আসলো।
ও আজকে একটা নীল কামিজ পরে আসলো। খুব সুন্দর মানিয়েছে।
কিন্তু ওর চেহারায় একটা কেমন জানি চাঞ্চল্যকর অস্থির অস্থির ভাব।
-'Hi, Ava. কেমন আছো? আজকে হটাৎ এত আর্জেন্ট ডাকলে। হুম বেপার কি? তোমার আজকের কথা মনে আছে?! '
- ' আজকের কথা কেন মনে থাকবে আজকে তো তোমার বার্থডেও না তাহলে ! আচ্ছা আমি একটা কথা বলব। '
- আভা বলল ।
আজ কেনো জানি ওর কথায় কিছু একটার অভাব ছিল।
-'এত ব্যস্ত হচ্ছো কেনো?! তুমি দাড়াও আমার তোমার জন্য একটা Surprise আছে। দেখবে..? '
-'Surprise? কী এমন Surprise? '
-'দাড়াও না এত ব্যস্ত হচ্ছো কেনো? '
বলেই আমি হাটুগেড়ে আভার দিকে ফুলটা বাড়িয়ে দিলাম। আর বললাম আই লাভ ইউ আভা। তুমি আমার জীবনের জন্য সব। কিছুক্ষন ধরে গোলাপটা এগিয়ে দিলেও ও নিচ্ছিল না তাই আমি বললাম -'নাও গোলাপটা নাও ।
কিছুক্ষন পর ও বলে উঠলো -
-'এটা আর সম্ভব না সাজিদ। আমি তোমার দেয়া গোলাপ আর নিতে পারবো না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। I'm sorry.'
আমি অবাক বিস্ময়ে আভার দিকে তাকালাম।
-'I'm sorry মানে। আমি তোমার কথার মানে বুঝতে পারছি না। কি বলছো এগুলা?! '
আভা আমার কথাগুলোতে খুব বিরক্তি প্রকাশ করলো।
-' হ্যাঁ আমি সত্যি বলছি। আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। '
-' বিয়ে ঠিক হয়েছে মানে ? তুমি নিশ্চয় অসম্মতি দিয়েছো বিয়েতে ।
আমি আজকেই আমার মা কে পাঠাবো তোমার বাসায়।'
- ' না দরকার হবে না । আমার সম্মতিতেই বিয়ে হচ্ছে ।'
-'তোমার সম্মতিতে মানে ? তুমি মজা করছো তাই না ?'
-' না ! আমি মজা করছি না । ছেলে আমেরিকা থাকে । বিয়ের পর আমিও চলে যাবো । আজকেই আমাদের শেষ দেখা । আর কোনোদিন আমাদের দেখা হবে না ।'
আভার মুখে এই কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পরছে ।
আর আভার কথাটা বলতে একটুও সংকোচ বোধ হলো না? কেনো ?
এভাবে চলে গেলো ?কেনো চলে গেলো ?
তার সব পছন্দগুলো আমার জন্য ধূলিসাৎ করে দিলো !
কেনো?! আমার ভিতর কি এমন ছিল না। আমার কি এমন অপূর্ণতা। আমার কি দোষ ছিল। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম এইটাই কি দোষ ছিল?
- কথাগুলো বলতে বলতে ভাইয়া দৌড় দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো
(হটাৎ একটা আর্তনাদ )
জানালা দিয়ে দেখলাম যেটা আমি স্বপ্নেও ভাবি নি যা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। সেদিন সাপের চলার গতির মতো লাল রক্ত পাশের ড্রেনে গড়িয়ে যাচ্ছিল।
তখন আমার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি ঝরে নি, একটা আওয়াজ পর্যন্ত বের হয় নি। অনেক কান্না এসেছিলো তাও কাদঁতে পারি নি সেদিন।
কিছুক্ষন বাদে জায়গাটায় হৈ-হুল্লোর শুরু হলো। চারদিক পুলিশের রাবারের ফিতায় বাধা হলো।কান্নার রোল।ভাইয়া আত্নহত্যা করছে !
বাস্তবতার সামনে আরেকবার ভালোবাসার পরাজয় হলো। মূক হয়ে রইলাম আমি। চিরদিনের জন্য ভাইয়া ডাকটা হারালাম।আর কাকে ভাইয়া বলে ডাকবো? কার সাথে ঝগড়া করবো? স্তব্ধ আমি। মূহুর্তের মধ্যে কি হয়ে গেলো? নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। বাস্তবতা কেনো এত নিষ্ঠুর?
আজ ভাইয়ার মৃত্যুর এক বছর । মৃত্যু? নাকি হত্যা? যেই হত্যার কোনো বিচার পাওয়ার চেষ্টা করি নি।
আজকের দিনেই ভাইয়া মারা গিয়েছিলো। অদ্ভুত হলেও সত্যি যেদিন ভাইয়ার প্রথম প্রেমের সূচনা হয় সেই তারিখেই ভাইয়ার মৃত্যু। এই এক বছরে সবাই অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে গেলেও আমি পারি না। একটা বছর পার হয়ে গেলো আমি ভাইয়ার মুখে আমার নাম শুনি না।
ভাইয়া মারা যাওয়ার দিন আমি কাদি নি কিন্তু আজকে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে আমার ।
বাস্তবতা সত্যি এত নিষ্ঠুর তা আগে জানতাম না। ভাইয়া সেইটা জানিয়ে গেলো। সেইতো গেলো একেবারে না ফেরার দেশে চলে গেলো।
(সমাপ্ত)
-------