(চতুর্দশ পর্ব)
ভীড় এড়িয়ে এককোণে দাঁড়িয়ে আছে কবিরের বাবা- মা, কবির। রাত বাড়ছে নিজের মতো। আত্মীয়-স্বজন সকলে ক্লান্ত হয়ে গেছে। চেয়ারে বসে বিশ্রামের পাশাপাশি একটু আগেই ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত। কবির গল্পে মশগুল মহিলাদের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাকে বললো,
- 'ঠিক কি ঘটেছিলো এটা না জানলে আমি কিভাবে পরিস্থিতি সামলাবো বলো তো?'
কবিরের মা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো,
- 'সামান্য একটা বিষয় নিয়ে তুলকালাম বেঁধে গেলো।'
- 'সামান্য থেকেই বিস্তার শুরু হয়, মা।'
- ' অনুষ্ঠানের তদারকী তো তূবা নিজে করছিলো। ভরসা করার মতো কাউকে পায়নি। আমাদের বাড়ি থেকে আনা উপহার ও খাবার গুছিয়ে রাখতে গিয়ে দইয়ের হাড়ি দেখেছিলো। তোরা দুজনে মিলে আয়োজনের সমস্ত পরিকল্পনা করেছিস, কিন্তু তুই তূবাকে দইয়ের কথা জানাসনি। দই কোথা থেকে এলো জিজ্ঞাসা করতেই তোর ফুপি গটগট করে সবটা বলে দিলো। রুবিনা আপার আচরণ তো জানিস! সবসময় সন্দেহ করা উনার স্বভাব। সন্দেহের বসে কতোকিছু বানিয়ে বলে দিয়েছে।'***
তূবা দইয়ের হাড়ি দেখে মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলো। কিন্তু খাবারের লিস্টে দইয়ের কথা তো উল্লেখ ছিলো না। তাহলে দইয়ের ম্যেনু এড করলো কে? তূবা পাশ ফিরে রুবিনাকে দেখে মুচকি হেসে বললো,
- 'ফুপি, দইয়ের কথা তো লিস্টে ছিলো না। দইয়ের ব্যবস্থা করলেন কোথা থেকে?'
- 'সেকি! তুমি আর কবিরই তো সব আয়োজন করলে। কবির তো সেই কবেই বগুড়া গিয়ে দইয়ের অর্ডার করে এসেছিলো।'
- 'এগুলো বগুড়ার দই?'
- 'হ্যাঁ। এই দই আনতেই তো কবির বগুড়া গেলো। তোমার সেই আত্মীয়ের ওখানে কয়েকদিন থেকেও এসেছিলো। ওখান থেকে এসে বগুড়ার প্রশংসা করে করে অস্থির।'
- 'আমার আত্মীয়? বগুড়ায় আমার কোনো আত্মীয় তো নেই, ফুপি।'
- 'সেকি কথা! ওই যে রাইসা মেয়েটা তোমার আত্মীয় নাহ? কবির ওর সাথেই তো ছিলো বগুড়ায়। মেয়েটা বিয়েতেও তো এসেছে।'
- 'কে রাইসা? আমার সত্যিই বগুড়ায় কোনো আত্মীয় নেই। কবির বগুড়া গিয়েছে আমি জানতামও না।'
- 'তাহলে মেয়েটা কে? আমাদের যে বললো, তূবার আত্মীয়। সাথে করে বিয়েতেও নিয়ে এলো। মেয়েটাকে আমার শুরু থেকেই কেমন যেনো লাগছিলো! কবিরের সাথে সারাক্ষণ লেপ্টে থাকে। কবির ছাড়া কারো সাথে তেমন কথাও বলে না। একটু আগে তো দেখি, তোমার দিকে চেয়ে চেয়ে কাঁদছিলো।'
- 'আমাকে দেখে কাঁদবে কেনো?'
- 'তোমার জায়গায় হয়তো নিজে বসতে চেয়েছিলো।'
- ' কি বলছেন, ফুপি?'
- ' এখনও বুঝতে পারছো না? কবিরের সাথে এই মেয়ের নিশ্চয় কোনো গন্ডগোল আছে। না হলে কবির তোমাকে না বলে বগুড়া যাবে কেনো? কখনো তোমাকে না বলে কোথাও গিয়েছে ও? যায় নি তো।'
- 'নাহ। কোথাও গেলে বলে যায়।'
- 'বগুড়া গেলো, দু'রাত থেকে এলো। আমি তো শুনলাম ওই মেয়ের সাথে বেশ ঘুরাঘুরিও করেছে। কাঁকন নাকি কবিরের মোবাইলে ছবি দেখেছে। ভেবে দেখো, একটা মেয়ে একা এমন করে অচেনা কোনো ছেলের বিয়েতে কেনো আসবে? আর তার হবু বউকে দেখে চোখের জল কেনোই বা ফেলবে?'
- 'ওদের মাঝে কোনো সম্পর্ক আছে?'
- 'অবশ্যই। হয়তো আগে থেকেই ছিলো। আবার হতে পারে বগুড়া গিয়ে সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। ছেলে মানুষের চোখ! সব সময় উজ্জ্বল জিনিসে আটকায়। তোমার বয়স হয়েছে, চেহারা ভাঙ্গছে। ওই মেয়ে তো সবে যুবতী, উঠতি শরীর। ছেলে মানুষের মন টলতে সময় লাগে!'
YOU ARE READING
কল্পে বিকল্পে তুমি
Romanceকবিরের কথাগুলো রাইসা কিছুই না শুনতে পেলো আর না বুঝতে পেলো। রাইসার সম্পূর্ণ মনোযোগ তখন কবিরের বৃষ্টিস্নাত মুখশ্রীতে। ছোট ছোট চুলগুলো বেয়ে টুপ করে ফোটা ফোটা পানি পরছে কপালে। রাইসার মনে হলো এই মুখটা তার ভীষণ আপন। এই মুখে তাকিয়ে জীবন পার করে দেওয়া যা...