#Journey
#৪৪
আবুল হাসমত আলী চেয়ারম্যান আয়েশ করে বসার ঘরের কাউচের উপর পা তুলে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।নাহ,আজকের চা টা ঠিক আছে,যেমন লিকার,তেমন দুধের ঘনত্ব,ঠিক তেমনই চিনি।যদিও ভাত খাওয়ার পর এই চা খাওয়ার বদঅভ্যেস নিয়ে তার স্ত্রীর অনেক আপত্তি আছে,তবুও মনে মনে স্ত্রীর প্রশংসা করেন।গত তেত্রিশ বছর ধরে এই মানুষটা তাকে সবসময় চা দেয়।অন্য কোন কাজ থাকলে সেটা প্রয়োজনে ফেলে আসে,তবুও নিষ্ঠার সাথে প্রতিদিন চা তার স্ত্রীই দেয়।হাসমত মনে মনে হাসেন।মেয়ে মানুষ বশে রাখা একটা গুণের ব্যাপার,সবাই পারে না!
এসব হাবিজাবি ভেবে ভেবে পেপার চোখ বুলান তিনি ।কিছুক্ষণ পর কাজের ছেলেটা আসে।
"সাব,দুইজন,না না,একজন আইছে, আপ্নের লগে দেহা করবার ছায়।কি কমু?"
হাসমত আলী বেশ বিরক্ত হয়।দুপুরের এই সময়টা অফিসিয়াল কাজ ছাড়া অন্যান্য দিন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করেন।এই সময় এমন বিরক্তি আবার কোত্থেকে আসল?মাথা নাড়িয়ে বলেন,
"ডাক,ভিতরে আন"
ফুরুৎ করে ছেলেটা চলে গেলে কিছুক্ষণের মাঝে কটকটে সবুজ টিশার্ট আর কালো ত্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়া এক বিদেশী ছেলে ঘরে প্রবেশ করে।হাসমত আলী নড়েচড়ে বসেন।বিদেশী মানুষ মানে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু! মুখে তেলতেলে হাসি ফুটিয়ে বলে,
"Sit please,sit. How I help you?"
সেলিম সোফার এক প্রান্তে বসে বলে,
"আমি বাংলা পারি"
"ওহ,আচ্ছা! কিন্তু দেইখা তো বাঙালী লাগে না,আপনে..."
"আমি একটা ব্যক্তিগত কাজে আপনার কাছে এসছি।"
"নাম কি?"
"সেলিম,সেলিম আজহার"
"তা কি কা্মে আইছেন?"
"আমি সরাসরি বলি,জেসমিন আমান নামে কাউকে চিনেন?"হাসমত আলী কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে চিন্তা করেন।এই ছেলে কোন জেসমিন এর কথা বলে?
"বুঝতাছি না।জেসমিন আবার কেডা?"
"জেসমিন আমান,ইটালী থাকে।সে কি আপনাকে কিছু বলে গেছে অথবা কিছু দিয়ে গেছে?"
"কোন জেসমিন?আমি তো জেসমিন নামে কাউরে চিনি না"
"কিন্তু আমি যেটুকু জানি,তাতে আমার তো মনে হয় আপনাকেই বুঝায়"
"কেমনে?"
"আপনার নাম হাসমত আলী,না?"
"হুম"
"অনেকেই আপনাকে মাতবর আলী ডাকে,ডাকে না?"হাতের কাপে আর চা অবশিষ্ট নেই।হাসমত আলী উঠে দাঁড়ায়।
"আমার সাথে বাইরে আসেন,বাগানে হাঁটতে হাঁটতে কথা কই।আপনে আমারে এই জেসমিনের কথা জিগাইতাছেন কেন বলেন তো?হে আপনের কে লাগে?"
"আমার মা"
"মা?কই,চেহারা দেইখা তো মিল পাওন যায় না!"
"তার মানে আপনি আমার মাকে দেখেছেন!"হাসমত আলী ভ্যাবাচ্যাকা খায়,সে সেলিম নামক যুবকের কাছে কথায় ধরা খেয়েছে যাচাই করতে গিয়ে।আবারো সেই তেলতেলে হাসি দেয়।হাঁটেত হাঁটতে বলে,
"তোমার আম্মা আইছিল আমার কাছে একবার,আসলে হে আমার ছোট বইনের বান্ধুবী।আমার কাছে আইছিল চাইর বছর আগে, একটা ছোড বাক্স দিয়া গেছে।কইছিল,একদিন একজন আইব এইডা নিতে,সেইডা কাইল হতি পারে,কয়েক বছরও লাগবার পারে।তোমার নামই কইছিল,তয় এইডাও কইছিল,আমি জানি একটু বাজাইয়া দেহি।বাজাইয়া দেহা মানে বুঝো তো?যাছাই করা।আমি তোমারে কি বাজামু,তুমিই আমারে বাজাইয়া দিছ!হা হা হা।জানি না বাক্সে কি আছে,তুমি বাবা দাঁড়াও, আমি আসতাছি"ঘরের ভেতর গিয়ে দশ মিনিট পর বেরিয়ে আসে।ছোট একটা কাঠের বাক্স হাতে দেয়।সেলিম ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসতে চাইলে হাসমত আলী তাকে
খাবারের অনুরোধ জানায়।কিন্তু হাতে যখন দ্বিতীয় ক্লু,তখন কি আর পেটে খাবার জুটবে?সেলিম তাড়াহুড়া করে বিদায় নিয়ে চলে আসে সেখান থেকে।গাড়িতে বসে শিমুলকে নির্দেশ দেয় গাড়ি গাজীপুরের দিকে ঘোরাতে।পাকা রাস্তায় উঠার পর ঝাঁকুনি কিছুটা কমে আসে,আর তখন সেলিম বাক্সটা খোলে।উত্তেজনার সাথে খেয়াল করে সেখানে একটা কাঠের পাতলা ফলক আছে,তাতে খোদাই করে লিখা,
"বিনোদপুরে আছে এক মন্দির,তার ডান পাশে থাকা পুরোহিতের ঘর থেকে ত্রিশ হাত পশ্চিমে এক পুকুর,তার তলায় আছে পরের সুত্র আর গ্রাম!"সেলিম এক হাতে চুল খামচে ধরে।এই সূত্রের মানে কি???
চলবে...
লেখনীতে, #AbiarMaria
YOU ARE READING
Journey (Completed✅)
Mystery / ThrillerA walkway to destiny... ইটালিতে থাকা জেসমিন আয়াজ তার জীবনকে নতুন রূপে সাজাতে,নতুন মোড় নিতে শুরু করে "জার্নি"। এই জার্নি তাকে নিয়ে যায় আরেক জার্নির পথে,সেখান থেকে আরেক জার্নিতে।একের পর এক জার্নিতে তার জীবন বদলে যায়।জার্নিই তাকে নিয়ে যায় তার এমন গন্তব...